ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২, ২২ জুলাই ২০২৫, ২৫ মহররম ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

শহরে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮
শহরে সীমিত আকারে ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে বিশেষজ্ঞরা

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে বেশিরভাগ দল অবস্থান নিলেও বিশেষজ্ঞরা পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের মতে, কেবল এ যন্ত্রে ভোট নেওয়ার মাধ্যমেই কারচুপি, সন্ত্রাসের যে ‘কলঙ্ক’ রয়েছে তা দূর করা সম্ভব।
 
 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য হাতে আছে চার মাসেরও কম সময়। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন চাইলেও ১শ আসন কিংবা বড় পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করা সম্ভব নয়।

কেননা, দেশের বাইরে থেকে যন্ত্রপাতি কিনে এনে একশ আসনের জন্য দেড় লাখ ইভিএম প্রস্তুত করাও সম্ভব নয়। এছাড়া ভোটার ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে। সেটাও দেওয়া সম্ভব নয়। যেহেতু ভবিষ্যতে এ যন্ত্রের ব্যবহার করতেই হবে, তাই সীমিত আকারে করতে হবে।
 
বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থার ইতিহাসে যন্ত্রের ভোট নেওয়ার পদ্ধতি চাল করে এক-এগারোর সময়কার এটিএম শামসুল হুদার নির্বাচন কমিশন। ২০১০ সালে তারা এ যন্ত্রে ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা চালু করে। সে সময় লক্ষ্য ছিল স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহারের পর ২০১৯ সাল নাগাদ সংসদ নির্বাচনেও এ যন্ত্র ব্যবহার। ওই কমিশনের সদস্যরা মনে করছেন, এখন সীমিত আকারে হলেও ইভিএম ব্যবহার করা উচিত।
 
এদিকে ইভিএম নিয়ে ইসির গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির বিশেষজ্ঞরাও মনে করছেন, বর্তমানে যে ইভিএম ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে, এটি দিয়ে কারচুপি করা সম্ভব নয়। সহিংসতা রোধ, দ্রুত ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশের জন্যই এ যন্ত্রটি ভোটে ব্যবহারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।
 
এটিএম শামসুল হুদা কমিশনের সদস্য, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এ বিষয়ে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইভিএম ব্যবস্থাটি চালু করেছিলাম জাতীয় নির্বাচনে ব্যবহারের জন্যই। কিন্তু তার আগে স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করে আস্থা ও জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্য ছিল। ইতোমধ্যে আমাদের সময় থেকে এ পর্যন্ত অনেক স্থানীয় নির্বাচন হয়েছে। সেখানে ভোটাররা এ যন্ত্রটি খুব ভালভাবেই নিয়েছে। এটা চালিয়ে যেতে হবে।
 
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যে সময় আছে, তাতে ইসি বড় পরিসরে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুতিও নিতে পারবে না। তাই ছোট পরিসরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যন্ত্রটি ব্যবহার করা উচিত। এক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে, শিক্ষিত শ্রেণিকে টার্গেট করে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করতে হবে। তাহলে মানুষ তাড়াতাড়ি গ্রহণ করবে। এটা ছাড়া উচিত নয়। আমরা এটার পক্ষে। কেননা, কেবল ইভিএম দিয়েই আমাদের সহিংসতা, কারচুপির যে কলঙ্ক রয়েছে, তা দূর করা সম্ভব।
 
ইভিএম সম্পর্কি ইসির টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হায়দার আলী বাংলানিউজকে বলেন, নতুন ইভিএম যন্ত্র কারিগরি দিক থেকে উন্নতমানের। এটি দিয়ে কারচুপি করা বা ফলাফল পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এছাড়া ইভিএমে ভোট হলে কারচুপি ও সংহিসতা রোধ করা সম্ভব। তাই আমরা এ যন্ত্র ব্যবহারের সুপারিশ করেছি।
 
তিনি বলেন, এটা বাস্তবতা যে, নির্বাচনের জন্য যে সময় হাতে আছে, এই সময়ের মধ্যে বড় পরিসরে বা ১শ আসনে ইভিএম ব্যবহার সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন এ সময়ের মধ্যে এতো ইভিএম তৈরিই করতে পারবে না। তাই আমাদের সুপারিশ হচ্ছে সীমিত আকারে শহরাঞ্চলে এ মেশিন ব্যবহার করা। কেননা, ভোটারদেরও প্রশিক্ষণের বিষয় রয়েছে। গ্রামের অধিকাংশ ভোটাররা এ সময়ের মধ্যে ইভিএম বুঝতেও পারবেন না, জানবেনও না।
 
হায়দার আলী বলেন, আগের ব্যবহার করা বুয়েটের তৈরি ইভিএম এবং নতুন ইভিএম তুলনামূলক পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে, এ ইভিএমের ফ্লপি ডিস্ক ভালো। যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কম এবং ভোটের মাঝ পথে বন্ধ হবে না। ফল পরিবর্তন বা একজনের ভোট অন্যজন দিতে পারবে না। তাই এটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
 
ইভিএম’র আদ্যোপান্ত
২০১০ সালে শামসুল হুদা কমিশন সিটি করপোরেশন নির্বাচন, পৌরসভা নির্বাচনে ব্যবহার করে ইভিএমের প্রতি ভোটারদের আস্থা তৈরি করতে সক্ষম হয়। সে সময় কয়েক দফায় তারা বুয়েটের কাছ থেকে ইভিএম ক্রয় করে। শামসুল হুদা কমিশনের ধারাবাহিকতায় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কমিশনও বেশ কিছু নির্বাচনে সফলতার সঙ্গেই যন্ত্রটি ব্যবহার করে। কিন্তু ২০১৩ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি কেন্দ্রে একটি ইভিএম বিকল হয়ে যায়। ওই নির্বাচনে আবার কাগজের ব্যালটে ভোট নিতে হয়েছিল।
 
নির্বাচন কমিশন প্রায় চার বছর চেষ্টা করেও সেই ত্রুটির কারণ ও সমাধান বের করতে পারেনি। ফলে রকিব কমিশন সেই ইভিএমগুলো নষ্ট করে নতুন ইভিএম ক্রয় করার নীতগত সিদ্ধান্ত নেয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকেই কেএম নূরুল হুদার বর্তমান কমিশন দেশের বাইরে থেকে যন্ত্রাংশ কিনে এনে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে প্রায় ৩শ ইভিএম প্রস্তুত করে নেয়। যে মেশিনগুলোই পর্যবেক্ষণ করে টেকনিক্যাল কমিটির ব্যবহারে সুপারিশ করে।
 
কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নতুন ইভিএম রংপুর, খুলনা, রাজধানী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নির্বাচনে সবমিলিয়ে ৩০টির মতো কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। যন্ত্র বিকল হওয়ার রেকর্ডও সৃষ্টি হয়নি।
 
এই নতুন ইভিএমের বিশেষত্ব হলো এখানে ভোটার তার নিজের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারবেন। ভোটাররা ভোট দেওয়ার জন্য আঙুলের ছাপ/ভোটার নম্বর/জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্টকার্ড ব্যবহার করে নিজের ভোট দেবেন। এছাড়া অন্য কোনো উপায়ে ভোটার তার নিজেকে ইভিএমে শনাক্ত করার সুযোগ পাবেন না।
 
ইতোমধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা গণমাধ্যমে বলেছেন, নতুন ইভিএম দিয়ে কারচুপি কোনোভাবেই সম্ভব নয়। বিএনপি কিংবা অন্য কোনো দল যদি দেখতে চায়, ইভিএম কিভাবে ব্যবহার করা হয় আমরা তা দেখাবো।
 
আরও পড়ুন
ইভিএম দিয়ে যেভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৮
ইইউডি/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Alexa