ঢাকা, শুক্রবার, ২০ আষাঢ় ১৪৩২, ০৪ জুলাই ২০২৫, ০৭ মহররম ১৪৪৭

ইচ্ছেঘুড়ি

টোনা আর টুনি | বিএম বরকতউল্লাহ্

গল্প/ইচ্ছেঘুড়ি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৫
টোনা আর টুনি | বিএম বরকতউল্লাহ্

ছোট্ট একটা গ্রামের পাশে ছোট্ট একটা বন। এ বনে টোনাটুনির সংসার।

বেশিদিন হয়নি সংসার বেঁধেছে ওরা। খুব সুখে-শান্তিতে দিন কাটছে ওদের। একজন চোখের আড়াল হলে আরেকজন পইপই করে খুঁজে ফেরে। না পেলে অস্থির হয়ে ওঠে। কারণে-অকারণে রাজ্যের মান-অভিমান চলে এদের মধ্যে। একজন রাগ করলে আরেকজন আদর করে রাগ ভাঙায়।

টোনা একটা ফড়িং ধরে চলে আসে টুনির কাছে। একা একা খায় না সে। দু’জনে ভাগ করে খায়। টুনিও টোনাকে রেখে কিচ্ছুটি খায় না। ওদের মধ্যে এতো আনন্দ-হাসি, মিল-মহব্বত দেখে বনের অন্য পাখিরা আড়ালে চোখ টাটায়, হিংসে করে। তারা ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে- ‘এ বনে বুঝি আর কেউ বিয়ে-হাতা করেনি গো; শুধু ওই টোনা আর টুনিই বুঝি করেছে। দেখো না কত রং ঢং ওদের। এত তামশা ভালো না গো, ভালো না। এসব দেখে গা জ্বলে। ’

এ কথাগুলো টোনা-টুনির কানেও এসেছে। একদিন টোনা গেছে খাবারের খোঁজে। এদিকে টুনি তো প্রতিবেশীদের কথা শুনে রাগে-কষ্টে গাল ফুলিয়ে বসে আছে। টুনি অভিমান করে নিজের কাছেই বলে, ‘সবাই বিয়ে করে খালি ঝগড়া-ফ্যাসাদ আর মারামারি করার জন্যে, আমরাই বা এত রং ঢং করছি কেন? যদি রোজ রোজ ঝগড়া করতাম, চুল টানাটানি করতাম তা হলে আর কষ্ট হতো না কারো। সবাই খুশি হতো।

কথাগুলো বলেই চিকন ডালে ঠোঁট ঘঁষে রাগে ছটফট করতে লাগলো টুনি। এমন সময় টোনা একটা পোকা নিয়ে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে গিয়ে টুনির পাশে বসলো। টুনি অভিমানে তিন লাফে সরে অন্য একটা ডালে গিয়ে বসলো। টুনির এ রকম ব্যবহারে টোনা অবাক হয়ে বললো, ‘ওম্মা, তুমি এমন করছো কোনো গো! কোনো ভুল-টুল করেছি আমি! কত কষ্ট করে একটা পোকা ধরে নিয়ে এলাম দু’জনে একসাথে খাবো বলে, আর তুমি কি-না মুখটা কালো করে দূরে সরে গেলে!’ টুনি অভিমানে চোখ লাল করে বলে, ‘এত ঢংঢাং আর ভালো লাগে না, বুঝছ? এখন থেকে দু’জনে ধুমছে ঝগড়া করবো, চুলোচুলি করে মাথার চুল ছিঁড়ে রক্ত ঝরাবো। হাতাহাতি ও মারামারি করবো।

তারপরে ডোবার কাদা-জলে গিয়ে কাদা মাখামাখি করবো। আমাদের ঝগড়া দেখে বনের সবাই হাসবে, গাইবে, আনন্দ-ফূর্তি করবে, নাচবে। তবু বনের সবাই খুশি হোক, মজা পাক। তারা শান্তিতে ঘুমাক। এত হিংসে আর ফিসফিসানি ভালো লাগে না আমার। ’ টোনা মুচকি হেসে বলে, ‘ব্যস, ব্যস আর বলতে হবে না তোমার। এখন সব বুঝতে পেরেছি আমি। আমাদের সুখ-শান্তি দেখে ওরা হিংসার আগুনে পুড়ছে আর তুমি রাগে ফোঁসফাঁস করছ, নাহ্! তুমি একটা আস্ত বোকা টুনি।

আরে বোকারাম হদ্দ, হিংসা যারা করে কষ্ট তো তাদের হয়। তুমি জানো না টুনি, আমি কিন্তু ওদের হিংসার কথা শুনে দারুণ আনন্দ পাচ্ছি এখন। এদের হিংসা আমার মনের জোর বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি তো মনে করি, এটা কোনো কষ্টের বিষয় হতে পারে না, আনন্দের বিষয়। ’ টুনি চোখ মুছে গালের টোল কমিয়ে টোনার কথাগুলো মন দিয়ে শোনার জন্য মুখ ফেরালো। টোনা বললো, ‘যারা হিংসা করে তারা কখনও উন্নতি করতে পারে না। যারা অন্যের ভালো দেখে খালি সমালোচনা করে তারা কখনও সামনে এগুতে পারে না, বড়ো হতে পারে না। তারা পড়ে থাকে পেছনে। তুমি বুঝেছো উল্টোটি, তাই তোমার এত কষ্ট লাগছে। ’

টোনা আগ বাড়িয়ে টুনির কাছে গিয়ে বলে, ‘আরে, তোমার আমার সুখ-শান্তি দেখে যে যা বলে বলুক গে। এতে আমাদের কিচ্ছু যায় আসে না। ’ -এ কথা বলে টোনা আর টুনি আনন্দে টুন-টুনা-টুন শব্দ করে নেচে উঠলো। আর এ শব্দ শুনে বনের পাখিদের মনে জ্বলে উঠলো হিংসার আগুন।


বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৫
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Alexa