ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড

‘আমরা একটা কমানোর কথা বললে দুইটা বাড়তি দোকান বসানো হয়’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩
‘আমরা একটা কমানোর কথা বললে দুইটা বাড়তি দোকান বসানো হয়’

ঢাকা: মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় চার শতাধিক দোকান পুড়েছে। আগুনে সব হারিয়ে ধ্বংস স্তূপের মাঝে ঘোরাঘুরি করতে ও নিজ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে দাঁড়িয়ে আহাজারি করতে দেখা গেছে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে।

এ মার্কেটে বিভিন্ন ধরনের দোকান ছিল। সবজি দোকান থেকে শুরু করে ছিল স্বর্ণের দোকানও।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলছেন, মার্কেটের ভেতরের ফুটপাতে বসানো অসংখ্য ছোট দোকানের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। মালামাল বের করতে পারেননি তারা। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আগুন নেভাতে দেরি করেছে। আগুন লাগার সময়ও মার্কেটে ছিল না পাহারাদার। হয়েছে লুটপাট।

বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট অগ্নিকাণ্ড স্থলে ব্যবসায়ীদের সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে দেখা যায়।  

এ সময় রেডিমেট গার্মেন্টস এর দোকান চন্দ্রবিন্দু ফ্যাশনের মালিক কবীর হোসেনের বাংলানিউজকে বলেন, পুড়ে যাওয়া দোকানের থেকে যা বের করছি, সেগুলো তো অচল। টাকা ছিড়ে গেলে বা পুড়ে যায়, সেই টাকা কী চালানো যায়। জামায় সামান্য ফুটা থাকলে সেটা কেউ নিতে চায়না। যা বের করেছি, সেগুলো চালানো মুশকিল। মাল ছিল প্রায় ৫০ লাখ টাকার। ডেকোরেশনসহ প্রায় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।  

তিনি বলেন, আমার দোকান ও গোডাউন ভরা মাল ছিল। আমার বাসা কাছেই সকালে শুনি কৃষি মার্কেটে আগুন লেগেছে। লুঙ্গী পরে চলে এসেছি।  

ফায়ার সার্ভিস আসতে অনেক লেট করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় লুটপাট হয়েছে। লুটপাট কারা করছে বলতে পারবো না। বললে আমাদের সমস্যা হবে। কারা ফুটপাতে দোকান বসায় সেটা আমরা বলতে পারবো না। সবাই জানে, আপনারাও জানেন। গলিতে ছোট দোকানের ফলে কাস্টমার ঢুকতে পারেনা। গলি ভরে যায়। এখন অনেকেই আসছে। কিন্তু আমাদের এই সমস্যা গুলো কেউ দেখতে আসে নাই। আজকে আমরা ক্ষতিগ্রস্থ। আমরা কান্না করছি। তারা এসে এসে দেখছে। এই দেখায় কোন কিছু যায় আসে না।

অলিগলির অবৈধ ছোট দোকান সম্পর্কে মার্কেটের সমিতিকে কিছু জানানো হয়েছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যদি বলি একটা কমানোর কথা বলি তাহলে আরও দুইটা বাড়তি দোকান বসানো হয়। আমরা কই বলবো, কাকে বলবো।

ছোট দোকান কারা বসিয়েছে তা বলতে চাননি এই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, এটা যদি বলি তাহলে আমার উপর চাপ আসবে। আমি কারও কথা বলতে পারবো না। ।  

দোকান মালিক সমিতির দিকে ইঙ্গিত করে শহীদুল ইসলাম মানিক নামের আরেক ব্যবসায়ী বলেন,  তারা যদি না চায় তাহলে তো ফুটপাতে দোকান বসতে পারতো না। এই মার্কেটে আমার চারটি কাপড়ের দোকান ছিল । চারটি দোকানে পুড়ে গেছে। ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। আমি যে এখনো সুস্থ আছি এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কাঁচা বাজার (কৃষি মার্কেট) ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ফায়ার সার্ভিস ও সিটি কর্পোরেশনের এমন অভিযোগের বিষয়ের পর মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ থাকলে ভেনে দেওয়া হল না কেন? 

এর আগে, বৃহস্পতিবার ভোর ৩টা ৪৩ মিনিটে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। প্রথমে একটি ইউনিট এলেও মার্কেট বন্ধ থাকায় তারা ভেতরে ঢুকতে পারেনি। যে কারণে আগুন দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এদিকে পৌনে ৬ ঘণ্টা পর সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে কৃষি মার্কেটের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ তথ্য নিশ্চিত করেন ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার। তিনি জানান, ভোরে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের ১৭ ইউনিট ও ১৩৭ জন কর্মী। আগুন নির্বাপণে এখনো আমাদের টিম কাজ করে যাচ্ছে।

আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর অগ্নি নির্বাপণী সাহায্যকারী দল। এ ছাড়া আগুন নিয়ন্ত্রণ, উদ্ধার অভিযান ও সার্বিক শৃঙ্খলায় ঘটনাস্থলে কাজ করে পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি, এনএসআই, স্কাউটের ভলান্টিয়ার সদস্যরা। বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে মার্কেটে ওপর থেকে পানি ছিটানো হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৩

এমএমআই/এমএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ

Alexa