ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২, ১৫ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

পায়ের নিচে ছবির মতো বলি পাড়া

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
পায়ের নিচে ছবির মতো বলি পাড়া ছবি: সোহেল সরওয়ার

আলীকদম (বান্দরবান) থেকে: টান পড়েছে শৈলপ্রপাতের পানিতে। শরৎ শেষে হেমন্ত শুরু হয়েছে দিন চারেক হলো।

শৈল প্রপাতে তাই বর্ষায় পাওয়া যৌবন হারানোর গান। পানির সঙ্কট তীব্র বলে শৈলপ্রপাতের মতো ঝরনার জলই ভরসা পাহাড়ের ঢালে বসতি গড়া মানুষের।

বর্ষা এলে এসব প্রপাত ফুলেঁ ফেঁপে ওঠে। শান্ত নালার তিরতিরে পানি পরিণত হয় তীব্র খরস্রোতে। তখন এই শৈলপ্রপাত  নেয় রুদ্র মূর্তি। বহু দূর থেকে শোনা যায় প্রপাতের গর্জন। এখন বর্ষা নেই। তবুও কি নজরকাড়া রূপ মেলে দ্রুত ছুটছে ঝরনার স্রোত। প্রপাত পাড়ের বাজারে আদিবাসী দোকানের সংখ্যা অনেক বেড়েছে আগের চেয়ে।


শৈলপ্রপাত ছেড়ে সামনে এগুনোর সঙ্গে সঙ্গে চোখের সামনে রূপ মেলতে থাকলো পাহাড়। গায়ে গায়ে ছোঁয়া ছোট-বড় পাহাড় সারির ওপাশে আজদাহাশরীর নিয়ে পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল পড়ে রইলে ডানে। বাঁয়ে গভীর গিরিখাদ। কোথাওবা দু’দিকেই খাড়া নেমে যাওয়া পাহাড়ের চূড়ায় নি:সঙ্গ জুমঘর, ছোটছোট আদিবাসী গ্রাম।  

এমনিতেই পাহাড় পেঁচিয়ে চলা রাস্তাগুলোর প্রতিটি বাঁককেই বিপদজনক মনে হচ্ছে, তারওপর হঠাৎ হঠাৎ চোখে পড়ছে ‘বিপদজনক বাঁক’ লেখাসাইনবোর্ড। এর মানে সামনের রাস্তা আরো বেশিই ঝুঁকিপূর্ণ।


রাস্তার পাশেই লম্বা লম্বা সেগুন গাছ, ঝাড়ু তৈরির চিকন কঞ্চির ঝোপ। পাহাড়ের শরীর জুড়ে আনারস, কলা, পেঁপে ইত্যাদি মিশ্র ফলের ক্ষেত। তবে রাস্তার পাশের পাহাড়ি বাজারগুলোতে পাহাড়ি ফলের পসরা এবার খুব একটা চোখে পড়লো না।

খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে রাস্তার ওপর গলা বাড়িয়ে এগিয়ে আসা ঝাঁকড়া রক্তজবার গাছটা বুঝি পাহাড়ে স্বাগতম জানালো মাথা দুলিয়ে।
রুমার রাস্তাকে বাঁয়ে রেখে থানচিগামী ওয়াই জংশনের উঁচু ল্যান্ডিংয়ে উঠতেই এক লাফে ১৭১৭ ফুটের ঘরে গিয়ে স্থির হলো আলটিমিটারের কাঁটা। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুক পাহাড়ের উপর উচ্চতা দাঁড়ালো ১৯৪৫ ফুট। রবি মামার উদয় ও অস্ত দু’টাই ভালো দেখা যায় চিম্বুক থেকে।

বাঁয়ে জোড়া বটগাছ আর ডানে সীতা পাহাড়কে সাক্ষী রেখে পিক-৬৯ এ উঠতেই অলটিমিটার স্থির হলো ২৩২১ ফুটে। থানচি-আলীকদম রাস্তা হওয়ার আগ পর‌্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার পাহাড় ছিলো এই পিক-৬৯ই। এ রাস্তায় ওঠার পর নীলগিরি পর‌্যন্ত উচ্চতা আর ১৭৬৮ ফুটের নিচে নামলোই না। সর্বোচ্চ উচ্চতা পাওয়া গেলো ২২৮১ ফুট।
নীলগিরির মাথায় উঠে পাওয়া গেলো ২২১৫ ফুট উচ্চতা। একসময় সেনাবাহিনীর পর্যবেক্ষণ চৌকি হিসেবে ব্যবহৃত হতো নীলগিরি। পরে সেনাবাহিনীরইতত্ত্বাবধানে এটিকে পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করা হয়। একটি কনফারেন্স রুম ও দু’টি ভিআইপি রিসোর্ট আছে নীলগিরিতে। এর একটির নাম মেঘদূত,অপরটির নাম  আকাশনীলা।  
বর্ষাকালে এখানে মেঘের সঙ্গে মিতালি হয় মানুষের। ভেসে আসা মেঘে শরীর ভিজে শান্ত হয় মন।  আকাশের পটভূমিতে ভেসে ওঠে রঙিন রংধনু। পূর্ব দিক দিয়ে বয়ে যাওয়ার সাঙ্গু নদীকে এখান থেকে সরু সাদা ফিতার মতোই মনে হলো।
 
চূড়ায় বসানো নির্দেশক বলছে, থানচি এখান থেকে ৩৩, বান্দরবান ৪৮, চিম্বুক ১৮, রুমা ৪৯ ও ক্রেওক্রাডং ৬২ কিলোমিটার দূরে।
নীলগিরি পার হয়ে ১৯৫৭ ফুট উচ্চতার জীবননগর পাহাড়। এ পাহাড়ে ভূত-প্রেতের রাজত্ব বলে বিশ্বাস করে স্থানীয়রা। এখানে খাড়া পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে পায়ের নিচে সাঙ্গুতীরের বলিপাড়াকে মনে হলো ছবির মতো গ্রাম।

ওই বলিপাড়া ছুঁয়ে দক্ষিণ থেকে উত্তরে বয়ে গেছে সাঙ্গু নদী । এই এতো দূর থেকেও সাঙ্গুর কোর্সটা ঠিকই বুঝা গেলো। মন ছুটে গেলো অর্শশত কিলোমিটারপেছনে, বান্দরবানে। পার্বত্য এলাকার সবচেয়ে দীর্ঘ নদী সাঙ্গু যেন এক পলকে বান্দরবানে নিয়ে গেলো নীলগিরিকে। নীলাচল থেকেও এই সাঙ্গুর চিকচিকে জল বেশ নজরে আসে।

জীবননগর পাহাড় থেকে নামার সময় অস্থির হয়ে উঠলো কম্পাসের কাঁটা। উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিম সব দিকেই কেঁপে কেঁপে ঘুরছে। যেনো এই কাঁটা কখনো স্থির হতে জানেই না।

বাঁকে বাঁকে পাক খেতে খেতে ১৫২ মিটার উঁচু আইলমারা ঝিরি সেতু পার হলো চাঁদের গাড়ি। এই ঝিরি জীবননগর পাহাড় থেকে নেমে সাঙ্গুতে মিশেছে। দীর্ঘ ঢাল বেয়ে থানচি বাজারে যখন সমতলের কাছাকাছি আসা গেলো, তখন রাস্তার উচ্চতা নেমে মাত্র দেড়শ’ ফুটে দাঁড়িয়েছে।

** পাহাড়ের উপরে দেবতার পুকুর
** পাহাড়ের খাদে রাম-সীতার ধুমনিঘাটে
**বাঁশের রাজবাড়িতে এক চক্কর
**বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ভারতীয় বাঁকে
** বয়সী বটের নিচে বিশ্বাসের বাসা
** গিরিখাদের হাজারছড়ায় সীমাহীন বিস্ময়

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১৬
জেডএম/


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে এর সর্বশেষ

Alexa